DEHLIJ

সঞ্জীব নিয়োগী

গাআস্টাকার

সঞ্জীব নিয়োগী




সুকেশ প্রতিদিনের গাড়ি চালাতে চালাতে সাধারণত কথা বলে না, যদি না প্ররোচিত করা হয়। তবে দীর্ঘ ড্রাইভ তাকে দিয়ে গল্প বলিয়ে নেয়। আর তার সমস্ত গল্প আমার মুখস্থ, এমনকী একই ক্রমে বলে সুকেশ তার কথা গুলো, যেগুলোকে এখানে গল্প বলে মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে।


বলল, স্যার, নিমাই পুরের মেয়েছেলেরা বিলবিত্তিস মদ খায়। সব পনেরো সতেরো কুড়ি বছরের মেয়ে, বুঝলেন। 

বুঝলাম কিন্তু বিলবিত্তিস কাকে বলে বুঝলাম না।

বুঝলেন না?

উঁহু।

হেব্বি মদ খায় স্যার আর টিল্টিল্পরি নাচে!

সে কী, হঠাৎ মদ খেয়ে মেয়ে গুলো নাচতে লাগে? এ আবার কেমন কথা!

অনেক গ্রাম আর অনেক মেয়ে দেখলাম স্যার, কিন্তু নিমাই পুরের মেয়েদের মতো মদ খেতে আর নাচতে জীবনে কোনোও গ্রামের মেয়েদের দেখলাম না।

কিন্তু আগে বলো টিল্টিল্পরি জিনিসটা কী আর নিমাই পুরের মেয়েরা হঠাৎ মদ খেয়ে নাচেই বা কেন? 

হঠাৎ কেন নাচবে স্যার, তাসা পার্টি বা ব্যান্ড পার্টি যখন এক্কেবারে সেই গিলজিত্তি রকমের বজায়, তখন নাচে! 

হুঁ...। তাসা পার্টি বা ব্যান্ড পার্টির কী দায় পড়েছে বলো তো, ওই মেয়ে গুলোর জন্য বাজাতে যাবে? বলো? মেয়ে গুলো কখন খানিক মদ খেয়ে পাগল হয়ে নাচবে সেই দায় কি ওদের? 

আরে ছি ছি, শুনুন না স্যার, পুরোটা না শুনে কী বুঝবেন বলুন!

বলো, শুনি।

কেউ ওরা বিলাতি মদ খায় না, সব শালা দেশি ঠাররা মাল গট গট করে খায় আর মুখ চোখ কেমন ঝলকে ওঠে লাল হয়ে...। বুঝলেন, কী সব চেহারা হয় তখন, সিনেমার হিরোইন ধারে কাছে ঘেঁষতে পারবে না।

শুনো সুকেশ, এতদূর বলছ ঠিক আছে, আগে বলো তাসা পার্টি বা ব্যান্ড পার্টি বাজাবে কেন ভাই? ওদের জন্য বাজাবেটা কেন আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না!

ধুর স্যার, বিয়ে হয় না মানুষের? জন্মদিন হয় না?

হয় তো।

তবে? আর শুনুন, এমন শালা গ্রাম ওটা, নিমাই পুর, গাঁয়ের কোনোও আর্মিতে কাজ করা ছেলে জম্মু কাশ্মীর থেকে বা লাদাখ থেকে ছুটিতে বাড়ি ফিরলেও ব্যান্ড বাজে আর মেয়েরা মদ খেয়ে নাচে। সব পনেরো সতেরো কুড়ি বছরের মেয়ে, পেটে এক ছটাক মদ পড়লে আকাশে ভাসতে থাকে...বুঝলেন কি না?

হুঁ...তুমি এত দেখলে কী ভাবে, আগে থেকে খোঁজ পাও নাকি? বলে যায় তোমাকে? সুকেশ?

নাচ হবে মদ হবে ব্যান্ড পার্টি আসবে আর কী বুঝলেন, খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা হবে না?

আচ্ছা?

তবে? আমি তো গাড়ির ডিউটি সেরে "সুপ্রিয় ক্যাটারার" এ কাজ করি সন্ধ্যার পর। সুপ্রিয় হচ্ছে হেব্বি লুজবুজি ক্যাটারার এই একালার, নাম খুব। আমি স্যার সন্ধ্যার পর ক্যাটারিং বয়ের কাজ করি। কত গ্রামে যেতে হয়। কিন্তু নিতাই পুরের মতো...

এই এই এই থামো, কোথায় নামবো বলিনি? দত্ত বাবুর অফিস বলেছিলাম না?

কথায় কথায় ভুলেই গেছি স্যার!

তুমি চা ফা খাও আমি বেরিয়ে ফোন করে নিব।


।।দুই।।

দত্ত দা, গুড আফটার নুন!

...নুন। পাঁচ পার্সেন্ট দিলে হবে না ভাই, ওটা নয়, কমসে কম সাত করো, বুঝলে?

তাহলে আমার কী থাকবে গুরু?

ধুর বাল, ওর কমে পারব না। মেয়ের বিয়ে আছে আসছে ফাল্গুনে।

আমারও তো ছেলের ইয়ে, প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজে ইয়ে...

অনেক কমিয়ে নিয়েছ গুরু এবার আমাদের জন্য কিছু ছাড়ো।

এক্সিকিটিভ ইঞ্জিনিয়র কে মোটা মাল দিতে হবে, সেও তো আমিই দিই।

ধ্যার, কান্না শেষ হয় না, না?

সেন্ট্রালের টিম আসছে, বুঝবে ঠ্যালা।

আমি কী করব, আমি কি একা খাচ্ছি?

বেশি চাচ্ছ যে, কাজ করবে কী দিয়ে ঠিকাদার বলো তো? বাবার বিচি দিয়ে? 

তাই করো, কে মানা করেছে?

আরে, টাকা আর মেয়েছেলে দুটোই সাপ্লাই করতে হয় রে ভাই। মেয়েছেলের বাতিক তো তোমারও আছে, খুক খুক, হি হি, আচ্ছা যাক, নাকি গুরু?

ভিডিও মিডিও করে রেখো না ল্যাওড়া তবেই হবে। একা মরব না জানে রেখো, সব কটাকে নিয়েই ডুববো।

থ্রেট দিচ্ছ, নাকি বাল?

ধুর ল্যাওড়া! সাত পার্সেন্ট দিলে হবে নয়তো টেন্ডার যে কোনোও সময় রদ করে দিব, ইয়ার্কি না, হ্যাঁ!

মেরে ফেলবেন, নাকি? 

বলছি শোন না, এদিকে কি কোনোও নিমাইপুর বলে গ্রাম আছে?

আছে। কেন?

আমার ড্রাইভার বলছিল ওখানকার কচি কচি মেয়েরা নাকি বাল মাল খেয়ে হেব্বি নাচ করে?

বটে? আপনার ড্রাইভার তো দেখছি ঘুঘু মাল আছে দাদা।

শোন না, ভার্জিন মেয়েছেলে মদ খেলে বাঁড়া হেব্বি গনগনে মুখের ভাব হয়, খুব এপিলিং, ইস, দেখাবি একদিন?

আরে ছাড়ো না, দেখাবো মানে? আমাদের বিপ্লবের বাড়িই তো ওইদিকে, তুলে নিয়ে আসবে বাল একদিন একটাকে।

ভাগ, ভাগ! সে কী বলছিস, তুলে আনবে কেন। আর একটা দিয়ে কী হবে ভাই? অনেক ভার্জিন একসাথে অনেক মদ খেয়েছে এবং মাতলামি তে ঢলে ঢলে পড়ছে, অনেক অনেক অনেক ভার্জিন মুখ, উন্মুখ, রগরগে, উত্তেজিত মদের প্রেরণায়, আমি সেই সমস্ত মুখ একসাথে দেখব, দেখতে চাই। হবে না?

ওহ বাবা, মাল্টি কুইজিন রেস্তোরাঁ আস্বাদনের ইয়ে? হাঃ হাঃ হাঃ। আচ্ছা বেশ। হবে। 

হবে? তাহলে পাঁচ পার্সেন্টই দিস। চলবে। কেমন?



।।তিন।।

লোকটা সেদিন হঠাৎ বাড়ি ফিরল। বাড়ি সে নিয়মিত এবং প্রতিদিন ফিরে আসে কাজের শেষে। তবু তার সেদিনের ফেরাটা হঠাৎ হয়ে গেল আর আকস্মিক হিসেবে চিহ্নিত হলো।

অতি দীর্ঘ অবহেলায় পড়ে থাকা দাম্পত্য নিয়ে বিবেচনা করতে করতে নানাবিধ বিষয় করলো।

হঠাৎ অভূত ও আশ্চর্য্যজনক আদর পেয়ে, বউ বলল,

"আমার কি কিছু হয়েছে গো? আমি কি বাঁচব না আর বেশি দিন?"

"সে আবার কী, কেন?" লোকটা অন্যমনস্ক হয়ে জিজ্ঞাসা করে।

"আমি কি তবে কিছু ভুল করেছি?"

"কখনও না।"

"তবে?"

"আমাদের যৌথ জীবন দারিদ্র্য সীমার নিচে বইছিল।"

"সে তো বহু দিন হলো। আজ আচমকা কী হলো? ডাক্তার নিশ্চিত আমার দিন বেঁধে দিয়েছে। তোমাকে বলেছে কিছু। লুকিয়ে রেখো না, বলো। তাহলে আমি কিছু নিজের মতো সাজিয়ে রাখতে পারব।"

"এটা ভালোবাসা।"

"সেটা এতো দিনে এলো নাকি? আমার কিন্তু সন্দেহ হচ্ছে, যা-ই বলো। হ্যাঁ গো, আমার কি আর দিন নেই বেশি?"

"আসলে দ্যাখো, আমি যে তোমাকে ভালোবাসার চেষ্টা করিনি তা নয়। তারপর ধীরে ধীরে হলো কী, একদিন বুঝতে পারলাম আমি যখন যখন অফিস ট্যুরে কদিনের জন্য শহরের বাইরে যাই, ঠিক তখন তখন তুমি ট্রিম করে নাও বা এক্কেবারে ক্লিন, ফিরে এসে দেখি।" 

"সে তো তুমি না থাকলে সময় কাটত না তাই ওসব করে সময় কাটাতাম।"

"যাই হোক, সে আলোচনা আজ আর করে লাভ নেই, তবে তারপর থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। সেটা হয়তো ঠিক হয়নি, কিন্তু বাস্তব তো এই।"

"সব মিলিয়ে আমার কী মনে হয় জানো? তুমি একটা আস্ত ইয়ে..."

"কী?"

"পেটে আসছে, মুখে আসছে না, মানে, কী যে বলব তোমাকে..."



।।চার।।

সুকেশ, আমার সরকারি গাড়ির ড্রাইভার, তারপর একদিন অনেকক্ষণ চুপচাপ গাড়ি চালাতে চালাতে একসময় একটা বিপজ্জনক মোড় অনায়াসে পার করে বলল, "স্যার, আপনি একটা আস্ত গাআস্টাকার।"

সেটা আবার কী?

গাআস্টাকার মানে বোঝেন না?

না তো!

আমিও বুঝি না।

তবে যে বললে?

মনে হলো স্যার আপনি একটা গাআস্টাকার তাই বললাম। মানেটা আমিও ঠিক জানি না। কেমন যেন মনে হলো তাই বললাম।


গাড়ি চলতে থাকে। দুজনই তারপর চুপ হয়ে যাই।


No comments

FACEBOOK COMMENT